আজব প্রাণী এক্সলোটল
টিকটিকির লেজ খসে গেলে ঠিক গাছের ডালের মতো কিছুদিন পর তা আবার আপনা থেকেই গজিয়ে ওঠে। মানুষের ক্ষেত্রে কেন এমন হয় না এমন প্রশ্ন বহু দিনের। এবার বোধ হয় এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। কারন বিজ্ঞানিরা এবার অন্য একটি প্রাণী- স্যালামান্ডারের পা গজাবার রহস্য উদঘাটনে অনুসন্ধান চালাবে। এই জন্য তারা প্রণীটির প্রোটিন নিয়ে ব্যাপক গবেষনা শুরু করেছেন বছর খানেক আগে।
সেসময় থেকে এক্সলোটল ধরনের স্যালামান্ডারের পায়ের তিন শ’ য়ের অধিক প্রোটিন পরিক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কোন কারনে প্রত্যঙ্গ হারাবার পর তা আবার ফিরে পাবার প্রকৃতিক এক বিশেষ ধরনের ক্ষমতা রয়েছে এ ধরনের স্যালামান্ডারের । ধারনা করা হচ্ছে এ জ্ঞান মানুষ ও অন্যান্য প্রণীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পুনঃউৎপাদনে কাজে লাগানো যাবে। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক এ গবেষণায় অংশ নিচ্ছেন।
‘কয়েক দিক দিয়ে বিচার করলে এক্সলোটলের এই প্রোটিন অধ্যয়ন অনেকটা আন্দাজের ওপর নির্ভরশীল। আর এটিই আমাদের জন্য মঙ্গল জনক হয়েছে। কেননা এই আন্দাজের কারনেই কিভাবে এই প্রাণী গুলোর পা পুনজন্ম গ্রহন করে সে সমন্ধে ধারনা করা গেছে’ -জানান গবেষণা প্রধান ইন্ডিয়না বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনঃউৎপাদি জীববিদ এবং চিকিৎসক অধ্যাপক ড.ডেভিড এল স্টোকাম।
অধ্যাপক ড. স্টোকাম বলেন ব্যাঙের বিচ্ছিন্ন করা পায়ে উপস্থিত প্রোটিনের সঙ্গে এসব প্রত্যঙ্গ পুনঃউৎপাদি পোটিনের তুলনা করে তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রত্যঙ্গ পুনরায় উৎপন্ন করার ব্যপারে আশাবাদি হওয়া গেছে। যা চুড়ান্ত ভাবে মানুষের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
সাধারন ভাবে দেখা যায় চামরি গাই, হরিন ও তাদের নিকট আত্নীয়ের শিং ; মানুষ এবং ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর নোখ; এবং ইঁদুর ও খরগোসের কিছু প্রজাতির কানের টিস্যূ ছাড়া স্তন্যপায়ী প্রণীর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আর পুনঃউৎপাদিত হয় না।
পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর পর এক্সলোটলের ক্ষত স্থানে এপির্ডামিসের নিচে কিছু অবিভাজিত কোষ জমা হয়। প্রক্রিয়াটিকে ব্লাস্টেমা গঠন বলা হয়ে থাকে। এই কোষগুচ্ছ বিভাজনরত ও স্থানিয় স্টেম সেলগুলোকে পুনঃনির্দেশিত করে।
অধ্যাপক ড. স্টোকাম বলেন ব্লস্টেমা নির্দেশিত হয়ে ঠিক কি প্রক্রিয়ায় প্রাণীটি তার পায়ের হারানো অংশ পুনঃউৎপাদন করে সে ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে সক্ষম এমন প্রোটিনের সন্ধান আমরা পেয়েছি। আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে পরিচিত জীববিদ ড. স্টোকাম বিগত তিন দশকের অধিক কাল ধরে প্রাণীর প্রত্যঙ্গ পুনঃউৎপাদন নিয়ে গবেষনা করছেন । প্রোটিন অনুন্ধান হতে পুননির্দেশনার মাধ্যমে এক্সলোটলের পায়ের পুনঃউৎপত্তি সমন্ধে বিজ্ঞানিরা তিনটি বিষয়ে জানতে সক্ষম হন। এ সময় বিপাকিয় কর্মকান্ড হ্রাসে বেশ কিছু এনজাইম কাজ করে। অনেক প্রোটিন আছে যারা ক্ষতের কোষের মৃত্যু ঠেকায়। অন্য একটি প্রোটিন কোষকে নতুন প্রত্যঙ্গ গঠনে বিশেষায়িত ও পুনঃনির্দেশিত হবার আগ পর্যন্ত বিভাজিত করে ব্লাস্টোমা গঠন করে।
নভেম্বর ২০০৯এর গবেষণার এ প্রাথমিক ফলাফল অনলাইন জর্নাল বায়েমেডিকেল সেন্ট্রাল বায়োলজিতে প্রকাশিত হয়।
উল্লেখ্য এক্সলোটল প্রজাতির স্যারমান্ডার এখন কেবল ম্যাক্সিকো শহরের কাছে জোকিমিলকো হ্রদে দেখতে পাওয়া যায়। আগে ম্যাক্সিকো উপত্যকার বেশকয়েকটি হ্রদে এদের দেখা মিলতো। দশ থেকে বার ইঞ্চির এ প্রণীটির ফুলকা দেহের বাইরে অবস্থান করে। প্রজাতিটির অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট হচ্ছে এরা লার্ভা অবস্থাতেই যৌন পরিপক্কতা অর্জন করে ও বংশ বৃদ্ধি করে । পরিবেশগত চাপকে লার্ভাদশা স্থায়ি হবার কারন বলে মনে করা হয়। আশপাসের পরিবেশ শুষ্ক হয়ে ওঠায় তা উভচর প্রাণীর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পরে । অন্যদিকে হ্রদের শিতল অক্সিজেন সমৃদ্ধ পানিতে পর্যাপ্ত খাবার থাকায় তা কালক্রমে প্রজাতিটির অন্যতম আবাস হয়ে ওঠে।
+ There are no comments
Add yours