২০১০: আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র বর্ষ
বিশ্বব্যাপী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জীববৈচিত্র (Biodiversity) সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ ২০১০ সালকে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র বর্ষ (International Year of Biodiversity) হিসেবে ঘোষণা করেছে। জীববৈচিত্র বিষয়ক কনভেনশন CBD নানাভাবে IYB উদযাপনে সহায়তা করছে। বছরব্যাপী নানা আয়োজনে পালিত হবে এই জীববৈচিত্র বর্ষ; তার মধ্যে রয়েছে সেমিনার, কনফারেন্স, সিমপোজিয়াম ইত্যাদি ইত্যাদি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাজারো আয়োজন। সবচেয়ে বড় আয়োজনটি হচ্ছে জাপানের নাগোয়া (Nagoya) শহড়ে। আগামী অক্টোবরে বিভিন্ন দেশের রাস্ট্র ও সরকার প্রধানরা মিলিত হচ্ছেন CBD এর COP10 এ। প্রসংগত বলে রাখি, কিছুদিন আগে কোপেনহেগেনে যে COP15 হয়ে গেল সেটি ছিলো ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনেরিও তে অনুষ্ঠিত ধরিত্রি সম্মেলনে প্রণীত জলবায়ু বিষয়ক কনভেনশন (UNFCCC) এর পঞ্চদশ সম্মেলন। সে বছর একই সাথে আরো দুটি কনভেনশন প্রণীত হয়, একটি মরুকরন বিষয়ক United Nations Convention on Desertification (UNCCD) এবং অপরটি জীববৈচিত্র বিষয়ক Convention on Biological Diversity (CBD)।
এবার জেনে নিই IYB এর উদ্দেশ্য (Objectives):
– জীববৈচিত্র সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি
-জীববৈচিত্রের অর্থনৈতিক মূল্য (economic value) সম্পর্কে তথ্য বিস্তার
-জীববৈচিত্র ধ্বংসের কারন ও তা সংরক্ষনের উপায় নিয়ে জনমানুষের ধারনা বৃদ্ধি
-ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে জীববৈচিত্র সংরক্ষনে উৎসাহ প্রদান
জীববৈচিত্র মানে প্রাণের বৈচিত্র। কোনো প্রাণগোষ্ঠীই (Life form) স্বনির্ভর নয়; জীবন ধারনের তাগিদে অন্য প্রাণগোষ্ঠীর উপর নির্ভর করতে হয় প্রতিনিয়ত। যে স্থানে (Ecosystem) জীববৈচিত্র যত বেশি, সেখানকার প্রাণগোষ্ঠীগুলোর জীবনধারন সেখানে তত সহজ। মানুষের জীবনধারনের জন্য জীববৈচিত্র কত প্রয়োজনীয়- এবার একটু হিসাবনিকাশ করি।
[b]এক[/b]. জীববৈচিত্র নেই- আমাদের খাদ্যও নেই। আজ থেকে প্রায় ১২,০০০ বছর আগে কৃষিকাজ শুরুর পর থেকে মানুষ প্রায় ৭,০০০ উদ্ভিদ ও কয়েক হাজার প্রানীর উপর তার খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল। বৈশ্বিক খাদ্য ও পু্ষ্টি নিরাপত্তার প্রধান (একমাত্রও নয় কি?) উৎস হচ্ছে জীববৈচিত্র। [b]দুই[/b]. আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রবর্তিত হওয়ারও আগে মানুষ চিকিৎসার জন্য চারপাশের গাছপালা -লতাপাতার উপর নির্ভরশীল যুগ যুগ ধরে। এখনও উন্নয়নশীল বিশ্বের কোটি কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠী- যাদের দোরগোরায় আধুনিক চিকিৎসার ছোঁয়া পৌঁছায় না- প্রথাগত চিকিৎসার (Traditional medicine) উপর নির্ভরশীল। আর এই প্রথাগত চিকিৎসার একমাত্র উৎস হচ্ছে জীববৈচিত্র। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০,০০০ উদ্ভিদ প্রজাতিকে মানুষ প্রথাগত ও আধুনিক চিকিৎসায় ব্যবহার করছে। [b]তিন[/b]. ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীববৈচিত্র সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। জীববৈচিত্রের আধার সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো পৃথীবির ১৫ ভাগ স্থলজ কার্বন সংবন্ধন (Terrestrial carbon sequestration) করছে। তাছাড়া, বনাঞ্চলের প্রাণবৈচিত্রে পূর্ন বিভিন্ন স্তর (Strata) কিভাবে ঘুর্নিঝড়, জলোচ্ছাসের শক্তি কমিয়ে দেয়- সেকথা আমাদের চেয়ে ভালো কেউ জানেনা। [b]ব্যক্তি হিসেবে আমার করনীয়:[/b]ক্রমবর্ধমান প্রাণবৈচিত্র ধ্বংস একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তারপরও ব্যক্তি হিসেবে তা সংরক্ষনে আমাদের প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এবার জেনে নিই সম্ভাব্য করনীয়:
১) সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন কৃষকের দোরগোরায় বা স্থানীয় (Local) বাজার থেকে অর্গানিক খাদ্য যেমন শাকসবজি, ফলমূল, ডিম- দুধ কিনব।
২) সামুদ্রিক খাদ্য ব্যবহার বাড়িয়ে দেব।
৩) সুযোগ থাকলে নিজের প্রয়োজনীয় শাকসবজি নিজেই উৎপাদন করব
৪) পরিবারের সবাইকে জীববৈচিত্র সম্পর্কে ধারনা দেব
৫) সর্বক্ষেত্রে ‘3R নীতি’ (অর্থাৎ Reduce, Re-use, Recycle) পালন করব
৬) ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে আমি যা করছি সেই অভিজ্ঞতা আমার সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে (যেমন facebook) শেয়ার করব।
rana_for@yahoo.com
+ There are no comments
Add yours