বাংলাদেশে প্রথম শ্বেত সরালী
শ্বেত বা অ্যালবিনো সরালী দেখা খুবই বিরল একটা ঘটনা। বাংলাদেশে শ্বেত সরালীকে এই প্রথম দেখা গেল। অনেকে শ্বেত কাক দেখেছেন বলে বলেন কিন্তু শ্বেত সরালীকে আমাদের দেশেই পাওয়া যাবে তা একদম অবাক করা ব্যাপার। অ্যালবিনো বা শ্বেত হল একটা রোগ। মানুষ বা অন্য কোন পশুর মধ্যে চোখে পড়ে। তাও আবার খুবই কম। পাখিতে একেবারেই কম। প্রতি বিশ লাখে একটা থাকতে পারে। গত মাসে ইনাম আল হক ও তার সঙ্গীরা চট্টগ্রামের পতেঙ্গার কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাতে যান জলচর পাখি গননা করতে।
গত বেশ ক’বছর ধরে এ এলাকাটিতে পাখি অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ। প্রায় আড়াইশ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এলাকাটি চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয়না। মোট আটটিভাগে পুরো জায়গাকে ভাগ করা হয়েছে। এর একেকটি ভাগের নাম দেওয়া হয়েছে পাখি দিয়ে। এর মধ্যে ছোট ছোট জলাশয়গুলোতে ঝরণার পানি জমে রীতিমত এখন দিঘীতে পরিণত হয়ে উঠেছে। শুরু থেকেই এই নিরাপদ স্থানটিতে পাখি আসতে শুরু করে। এখন তার সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গেলে তা জলচর পাখি শুমারিতে আনার জন্য কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবকে অবহিত করেন। জলচর পাখি শুমারিকালে শতশত সরালীর ঝাঁকের মধ্যে একটা সাদা ধবধবে হাঁস দেখে অনেকেই চমকে ঊঠেন। কিন্তু পাখিটির দৈহিক গঠন ও শারিরীক বর্ণনা থেকে সহজেই ইনাম আল হক আঁচ করতে পারেন এটা অ্যালবিনো সরালী ছাড়া আর কিছুই নয়। পরে ভিডিও ফুটেজ থেকে এর সণাক্তকরণ নিশ্চিত করা হয় এবং তা গত বুধবার বাংলাদেশে বার্ড ক্লাবের গ্যালারিতে সকলের জন্য দেখানোর ব্যবস্থাও করানো হয়। ইন্টারনেট থেকে শ্বেত সরালীর তেমন কোন গ্রহণযোগ্য তথ্য মেলেনি। তাই এটাও ধরে নেওয়া যেতে পারে যে বিশ্বে শ্বেত সরালী দেখার ঘটনা এটাই প্রথম। বর্তমানে কেইপিজেডে এ পাখি যেন ভাল থাকতে পারে এর জন্য নেওয়া হয়েছে বেশ সতর্কমূলক ব্যবস্থা। এখানে সাধারণ কোন লোককে দিঘীর পাশে ঢুকে হৈইচৈই করতে দেওয়া হয়না। তবে পাখি দর্শকদের জন্য এ জায়গাটি উন্মুক্ত। যে কেউ এখনও সেখানে গেলেই পাখিটিকে সহজেই প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।
শীতের শুরুতেই আমাদের দেশের বড় বড় নিরাপদ জলাশয়গুলোতে সরালীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। বাংলাদেশে সাধারণত দু’ধরণের সরালী দেখা যায়। ছোট সরালী ও বড় সরালী। এদের মধ্যে ছোট সরালীই আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। সরালীকেই আমাদের দেশের বেশীরভাগ লোক অতিথি পাখি হিসেবে ভুল করে। আমাদের মিডিয়াগুলো ফলাওভাবে অথিতি পাখি হিসেবে প্রচার করে। আসলে সরালী অতিথি পাখি নয়। এরা একেবারেই আমাদের দেশীয় পাখি। শীতকালে এরা কলোনি বেঁধে থাকে। একসঙ্গে খাবারের সন্ধানে এরা সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়ে। আবার ভোর হতে না হতেই ফিরে আসে শিস দিতে দিতে। এদের প্রিয় খাবারের তালিকায় থাকে উদ্ভিদের কচি ডগা, ফলমূল, শ্যাওলা, শামুক, ছোট মাছ ও ব্যাঙ। বর্ষাকালে এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। কারণ এসময় এদের বাসা বানাবার সময়। শীতকালে মিরপুর চিড়িয়াখানা, জাবি ক্যাম্পাস, বঙ্গভবন পুকুর, বিএলআরএ, মুন্সিগঞ্জের ইন্দ্রকপুর, দেশের বিভিন্ন বিল, হাওড়-বাওড়, নদী-নালা, খালে এদের ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেঁধে থাকতে দেখা যায়। ছোটখাটো ধরণের এ পাখিটি লম্বায় প্রায় ৪০সেমির মত। সরালীর মত ছোট বাদামী রঙের হাঁস আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। লেজের উপরিভাগের পালকগুলো চেস্টনাট, মাথার টুপিটি গাঢ় বাদামী। পা ও ঠোঁট কালো। সরালী ৭-১০টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ সাদা। তবে ডিমে তা দেওয়ার পর ফ্যাকাসে বাদামি রঙ ধারণ করে। গত ক’বছর ধরে দু’একটি সরালীর জোড়া জাবি ক্যাম্পাসে বাচ্চা ফোটাচ্ছে।
অ্যালবিনো সরালী বাংলাদেশের আরও এলাকায় পাওয়া যেতে পারে। শ্বেত এ পাখিটি দেখে এখন আর অবাক হবার কিছুই নেই। কেইপিজেডের মত আরও পাখি অভয়রণ্য গড়ে উঠলে তার কাছে হয়ত আপনি গিয়ে পাখিটিকে দেখে মুগ্ধ হতে পারেন। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের তত্ত্বাবধানে সারাদেশব্যাপী চলছে জলচর পাখি শুমারী ও পাখি উৎসব। ৮-১০ই ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি মেলা অনুষ্টিত হবে এবং ১৫ই ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখিমেলা অনুষ্টিত হবে।
পাখিমেলা ও পাখি শুমারির যেকোন প্রকারের সাহয্যোর জন্য যোগাযোগ করুন- বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, ০১৭১৬০৪৬৪২৪।
+ There are no comments
Add yours